হযরত আছিয়া (আঃ)- প্রথম অংশ-আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন—
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ آمَنُوا اِمْرَأَةَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ–সুরা—আততাহরীম, আয়াত ১১।
মুমিনদের জন্যে ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুস্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।
মুসলিম নারীদের জন্য চির বরণীয় ও অনুসরণীয় এক ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন আছিয়া। সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা সুউচ্চ প্রাসাদের আলীশান মহলে তিনি বসবাস করতেন। সবুজ বৃক্ষের তলদেশে প্রাসাদের গা ঘেষে নীল দরিয়ার স্বচ্ছ পানি বয়ে চলত অবিরাম। এমন সব নেয়ামত ও আয়েশের মাঝেও আছিয়া ছলেন অতৃপ্ত, অস্থির। তাহলে কোন সে পিপাসায় তিনি কাতর ছিলেন? কিসের অভাবে ছটফট করতেন তিনি? আল্লাহ পাকের কাছে আছিয়া কাতর দুয়া করেছিলেন—তিনি যেন তাঁর স্বামীর দুঙ্কর্ম থেকে তাঁকে হেফাজত করেন। তাঁর জুলুমবাজ কওমের হাত থেকে রেহাই দেন তাঁকে। তিনি আরো বলেছিলেন, তাঁর স্বামীর পৃষ্ঠপোষকতায় যে পাপের রাজ্য কায়েম হয়েছে, সেখান থেকে বের হতে তিনি উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন। অথচ এক সময় তিনি স্বামীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। হৃদয়জুড়ে ছিল তাঁর ভালবাসা। তাহলে তাঁর এ অভিযোগের প্রেক্ষাপট কী?
ফেরাউন তাঁর সামরাজ্জে বাদশাহ ছিল। সে ছিল ভীষণ কঠোর প্রকৃতির ও পাষাণ দিল। নির্বিচারে প্রজাসাধারণের উপর সে জুলুম অত্যাচার করত তাদের। ফেরাউন স্বেচ্ছাচারিতার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। অত্যন্ত অহংকার ও গর্ব করে বেড়াত সে। বনী ইসরাঈল ছিল তাঁর অবৈধ অত্যাচারের নিশানা। তারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে অত্যন্ত কষ্টের ভেতর দিয়ে ফেরাউনি রাজ্যে জীবন যাপন করছিল । বিপদ মুসিবতে ধৈর্য ধরা ছাড়া তাদের কিছুই করার ছিল না।
একদিন রাজদরবারের প্রধান জ্যোতিষী ফেরাউনের কাছে এসে বলল—বাদশাহ নামদার। অচিরেই বনী ইসরাঈলের মাঝে একজন সন্তান জম্ম নিবে। তাঁর হাতে আপনার সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য। জ্যোতিষীর এ সংবাদ বনী ইসরাঈলের উপর অত্যাচারের আগুনে ঘি ঢেলে দিল। ফেরাউনের পাষণ্ডতা উথলে উঠলো। জ্যোতিষীর এ অসহনীয় কথায় তাঁর উন্মত্ততা বেড়ে গেল কয়েকগুণ। নিজেকে একটু প্রবোধ দেয়ার জন্য, মনটাকে একটু সুস্থির করার জন্য বনী ইসরাইলদের উপর জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। সে তাদের নবজাতক পুত্র সন্তানদের ধীরে ধীরে নৃশংসভাবে হত্যা করতে লাগল। তবে শুধু কন্যা সন্তানদের জীবিত রাখত। অবশেষে আল্লাহ পাক বনী ইসরাঈলের ভাগ্য লিখনে পরিবর্তন আনলেন। তাদের পর্যাপ্ত শক্তি ও ক্ষমতা দান করলেন। ফলে ফেরাউন যে বিভীষিকার আশংকা করত, তা স্বচক্ষে দেখতে বাধ্য হয় সে।